বীমা কোম্পানির সিইও নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালায় ফের সংশোধন

বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ ও অপসারণ সংক্রান্ত বিদ্যমান প্রবিধানমালায় গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী এনেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । বীমা আইন, ২০১০ এর ধারা ১৪৮ ও ৮০ এর ক্ষমতাবলে সরকারের অনুমোদনক্রমে জারিকৃত এস.আর.ও. নং ৪৭৪-আইন/২০২৫–এর মাধ্যমে এই সংশোধনী কার্যকর করা হয়েছে।

নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও পেশাগত মানদণ্ড আরও সুস্পষ্ট ও কঠোর করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিশেষ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে শর্ত শিথিল করার ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে ২০২৩ সালের সংশোধনীতে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি।

গত ২২ ডিসেম্বর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা, ২০১২ এর অধিকতর সংশোধনীর প্রজ্ঞাপন গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার।

মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগে অভিজ্ঞতার নতুন মানদণ্ড

সংশোধিত প্রবিধান অনুসারে, কোনো বীমা কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বীমা খাতে ন্যূনতম ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এর মধ্যে কমপক্ষে ১ বছর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বা অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার পদে অথবা ৩ বছর উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

তবে উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের ক্ষেত্রে প্রধান কার্যালয়ে উন্নয়ন ব্যতীত প্রশাসনিক বা অন্যান্য দায়িত্বে অন্তত ১ বছরের অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এর আগে ২০২৩ সালের সংশোধনীতে মুখ্য নির্বাহীর কর্ম অভিজ্ঞতার বিষয়ে বলা হয়- ইতোপূর্বে কোন বীমা কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বা এর অব্যবহিত নিম্নপদে অন্যুন ২ বছর কর্ম অভিজ্ঞতাসহ বীমা ব্যবসায় অন্যুন ১২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা;

তবে, বীমাকারীর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত মনে করলে উল্লেখিত শর্তের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নিম্নোক্ত দু’টি ক্ষেত্রে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ অনুমোদন করতে পারবে।

সরকার বা সরকারি কোন দপ্তর, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কোনো বীমা কোম্পানি যার ৫০ শতাংশের অধিক শেয়ারের মালিকানা সরকার বা সরকার সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর, সংস্থা, বা প্রতিষ্ঠানের রয়েছে এইরূপ বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে; এবং আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত বহুজাতিক বীমা কোম্পানিতে উর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা পদে অন্যূন ১০ বছরের বীমা বিষয়ক কাজে সরাসরি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে।

সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানির জন্য বিশেষ ছাড়

বিশেষ বিবেচনায় এই অভিজ্ঞতার শর্ত শিথিল করার সুযোগ প্রবিধানমালার অধিকতর সংশোধনীতেও রাখা হয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন (৫০ শতাংশের বেশি শেয়ার সরকারের) বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বহুজাতিক বীমা কোম্পানিতে ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে ন্যূনতম দুই বছরের সরাসরি বীমা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে আইডিআরএ এই ছাড় দিতে পারবে।

বহুজাতিক বীমা কোম্পানির ‘ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা পদ’র ব্যাখ্যা

এক্ষেত্রে বহুজাতিক বীমা কোম্পানির কোন পদকে ‘ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা’ পদ ধরা হবে- তার ব্যাখ্যা দিয়েছে আইডিআরএ। সংস্থাটির ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা পদ বলতে বহুজাতিক বীমা কোম্পানির সিইও বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছাড়াও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান ডিস্ট্রিবিউশন কর্মকর্তা, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা, প্রধান অপারেশনস কর্মকর্তা, প্রধান এজেন্সি বিক্রয় কর্মকর্তা এবং প্রধান ব্যবসায় ডিস্ট্রিবিউশন কর্মকর্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী পদগুলোকে বোঝানো হয়েছে।

এছাড়াও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে প্রধান মানব সম্পদ কর্মকর্তা, প্রধান মার্কেটিং কর্মকর্তা, কোম্পানি সচিব, প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা, প্রধান ঝুঁকি কর্মকর্তা এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও কমপ্লায়েন্স প্রধান পদ।

পেশাগত ডিগ্রিধারীদের জন্য সুবিধা

নতুন সংশোধনীতে আরো বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট স্বীকৃত পেশাগত ডিগ্রি বা পদবি থাকলে মুখ্য নির্বাহী নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার শর্ত প্রয়োজনে শিথিল করা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে- অ্যাকচুয়ারিয়াল ফেলো বা এসোসিয়েট (ইউকে/ইউএসএ), চার্টার্ড ইন্স্যুরেন্স ইনস্টিটিউট (ইউকে), সিএলইউ (ইউএসএ), আইসিএবি, আইসিএইডব্লিউ, এসিসিএ, আইসিএমএ, সিএফএ ও সিপিএ ডিগ্রি।

নিয়োগ ও নবায়নের সময়সীমা বৃদ্ধি

সিইও নিয়োগ ও নবায়নের আবেদন নিষ্পত্তির সময়সীমা ১৫ দিন থেকে বাড়িয়ে ৬০ দিন করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত না হলে পরবর্তীতে অনুমোদন পাওয়া সাপেক্ষে মেয়াদপূর্তির তারিখ থেকেই তা কার্যকর হবে।

অপসারণে কঠোরতা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার ক্ষমতা বৃদ্ধি

নতুন সংশোধনীতে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, মানিলন্ডারিং বা আর্থিক অনিয়মের কারণে পূর্বে অপসারিত ব্যক্তিকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে তার নিয়োগ বা নবায়নের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলেও তিনি অযোগ্য হবেন।

কোনো বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী পদে কর্মরত থাকাকালীন দোষী সাব্যস্ত হয়ে আইনের ধারা ৫০ এর উপ-ধারা (১) বা প্রবিধান ৭ অনুযায়ী অপসারিত হলে অথবা প্রবিধান ৭ অনুযায়ী অপসারণযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও বীমাকারী তার অপসারণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হলেও তিনি অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।

একইসঙ্গে কোনো বীমা কোম্পানির পরিচালক, উল্লেখযোগ্য শেয়ারহোল্ডার (৫ শতাংশ বা তদূর্ধ্ব), পরামর্শক বা উপদেষ্টা হলেও তিনি মুখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগলাভের অযোগ্য হবেন।

এছাড়া, মুখ্য নির্বাহী অপসারণের ক্ষেত্রে আইডিআরএ’র ক্ষমতা আরও জোরদার করা হয়েছে। প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি গঠন করে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক সরাসরি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে কর্তৃপক্ষকে।

কর্মসম্পাদন মূল্যায়নে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

সংশোধনীতে নিয়োগ নবায়নের জন্য মুখ্য নির্বাহীর কর্মসম্পাদন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ‘কাজের যোগ্যতা’র পরিবর্তে “কর্মসম্পাদনের মান ও পরিমাণ” বিবেচনার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।