insurancejobsbd@gmail.com সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

বিআইপিডির সেমিনারে বক্তারা

এআই ব্যবহারে আর্থিক খাত আরও প্রতিযোগিতামূলক হবে


প্রকাশিত: ৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০৮

বাংলাদেশের আর্থিক খাত দ্রুত প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে, আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার প্রেক্ষাপটে রাজধানীর ইস্কাটনে বিআইএএম অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো বিআইপিডি আয়োজিত দিনব্যাপী সেমিনার ‘দ্য ফিউচার অব প্রফেশনাল এক্সিলেন্স অ্যান্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)’।

ব্যাংক, বীমা ও ফাইন্যান্স খাতের শীর্ষ নির্বাহী থেকে শুরু করে প্রযুক্তিবিদ এবং শিক্ষাবিদদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এই সেমিনারটি দেশে এআই-চালিত আর্থিক পরিবর্তনের নতুন দিকনির্দেশনা উপস্থাপন করে।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিআইপিডির চেয়ারম্যান এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এআই-নির্ভর রূপান্তরের যে বৈপ্লবিক যুগ শুরু হয়েছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশের খাত-সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত- সভাপতি তার বক্তৃতায় সে বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, এআই এখন আর ভবিষ্যতের বিষয় নয়; এটি আর্থিক খাতের কার্যক্রমে বাস্তবসম্মত প্রয়োগের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এবং সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে মানবসম্পদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

সেমিনারের উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স পিএলসির চেয়ারম্যান সাঈদ আহমেদ বলেন, আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা, গতি ও নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে মানব সমাজের জ্ঞান ও এআই-এর বিশ্লেষণক্ষমতার যৌথ প্রয়োগ অপরিহার্য। বিশেষ করে বীমা খাতে দাবি নিষ্পত্তি প্রক্রিয়াকে প্রযুক্তিনির্ভর করতে পারলে সেবার মান অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং গ্রাহক আস্থা আরও সুদৃঢ় হবে।

বিআইপিডির মহাপরিচালক কাজী মো. মোরতুজা আলী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রফেশনাল দক্ষতা মানেই প্রযুক্তির সঙ্গে অভিযোজিত হওয়ার ক্ষমতা। এআই মানুষের বিকল্প নয়; বরং এটি দক্ষ পেশাজীবীর সম্ভাবনাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে। তিনি বলেন, যথাযথ পর্যায়ে গবেষণা ও বাস্তবমুখী জ্ঞান না থাকলে ভবিষ্যৎ আর্থিক খাতে প্রতিযোগিতা টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. শহীদুল ইসলাম জাহিদ বাংলাদেশের বীমা খাতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের বিশাল গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এখনো মানসম্মত আর্থিক সেবার বাইরে রয়েছে, অথচ তাদের প্রত্যাশা সীমিত ও সহজ-সরল। প্রযুক্তিনির্ভর বীমা সেবা দুর্গম অঞ্চলেও পৌঁছে দিতে পারলে এই জনগোষ্ঠীর আর্থিক নিরাপত্তার চিত্র পাল্টে যেতে পারে। তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় বাংলাদেশের বীমা খাত এখনো প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক পিছিয়ে; গবেষণা, উদ্ভাবন এবং এআই-ভিত্তিক ঝুঁকি বিশ্লেষণকে অগ্রাধিকার না দিলে এই খাত বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না।

সেমিনারের আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পায় দ্রুত পরিবর্তনশীল আর্থিক পরিবেশে সাইবার নিরাপত্তা, জালিয়াতি প্রতিরোধ এবং ডিজিটাল ব্যাংকিং কাঠামোর নিরাপত্তা জোরদারের প্রয়োজনীয়তা। বক্তারা মনে করেন, প্রযুক্তিভিত্তিক আর্থিক সেবায় নিরাপত্তাই হবে ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, আর এ খাতে এআই-চালিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি আর্থিক বাজারে তথ্য-নির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং উন্নত রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের ক্ষেত্রেও এআই হবে সবচেয়ে সক্ষম হাতিয়ার।

সেমিনারে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা একমত হন যে, বাংলাদেশের আর্থিক খাতকে টেকসই ও প্রতিযোগিতামূলক করতে হলে এখনই এআই সমন্বিত কৌশলগত পরিকল্পনা নিতে হবে। মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি, গবেষণায় বিনিয়োগ, ডেটা-প্রযুক্তি অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতে প্রযুক্তির ব্যবহার- এসবই হবে ভবিষ্যতের আর্থিক ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি।

দিনব্যাপী আলোচনার পর উপস্থিত আগ্রহী পেশাজীবীরা জানান, এআই-চালিত পরিবর্তন শুধু খাতের দক্ষতা বাড়াবে না, বরং আর্থিক খাতকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে দিতে বড় ভূমিকা রাখবে। সঠিক পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিনির্ভর সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থিক খাতকে উচ্চতর মানে উন্নীত করা সম্ভব- এমনই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সেমিনারটি শেষ হয়।

এমএসএস

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর